View More

Jan 11, 2025 - 5 Minutes

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে ? প্রতিরোধে কি কি করবেন ??

মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ছে?

সুস্থ জীবন বলতে রোগমুক্ত জীবনকে বুঝে থাকি। অর্থাৎ, শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকলাপ যখন চলতে থাকে, তখনই আমরা দেহের সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হই। শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গের মধ্যে মুখ অন্যতম। মুখেও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো নানাবিধ রোগ হতে পারে। তার মধ্যে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া একটি সাধারণ মুখের অসুখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষই এ রোগে ভুগে থাকে। মুখের এই অসুস্থতার সঙ্গে অপরিচ্ছন্নতার বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে। নিয়মিত সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত পরিষ্কার না করাই এ রোগের প্রধান কারণ। কেননা, অপরিচ্ছন্নতার কারণে দাঁতের গায়ে জীবাণুর প্রলেপ পড়ে ও আস্তে আস্তে এই জীবাণুর প্রলেপ খাদ্যকণা ও লালার সঙ্গে মিশে দন্ত পাথরিতে পরিণত হয়। আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু দাঁতের জন্যও অতি সহজে ময়লা জমে এ ধরনের অসুবিধা হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় এই জীবাণুর প্রলেপ দূর না করলে আস্তে আস্তে মাড়ির প্রদাহ শুরু হতে থাকে। মাড়ি ফুলে লাল হয়ে যায়, সামান্য আঘাতেই মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। মাড়ির এই অবস্থায় তেমন ব্যথা না হলেও দৈনন্দিন জীবনে খাওয়াদাওয়া, কথা বলা বা দাঁত ব্রাশ করা, এমনকি কলাজাতীয় নরম খাবার খাওয়ার সময়ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে দেখা যায়।

মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়াই এ রোগের প্রধান লক্ষণ। অবশ্য কোনো কোনো সময় মাড়ি বিশেষ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে রোগী তীব্র ব্যথা অনুভব করে। এ সময় চিকিৎসার অভাবে ব্যথা ক্রমেই বাড়তে থাকে। স্থানীয় কারণ ছাড়াও দেহগত কারণেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ—রক্তশূন্যতা, হেমোফেলিয়া পারফিউরা, এমনকি কিছু কিছু রক্ত ক্যানসারেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। তা ছাড়া অপুষ্টিজনিত কারণে যেমন, ভিটামিন ‘সি’র অভাবে এবং গ্রন্থিরসের (হরমোন) বিশৃঙ্খলার কারণেও গর্ভাবস্থার সময় মাড়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তেমন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই এরূপ লক্ষণ দূর হয়ে যায়।

উপরিউক্ত কারণ ছাড়াও কোনো কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও রক্ত পড়তে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে মৃগী রোগীর চিকিৎসায় ইপানিউটিন নামের ওষুধ উল্লেখ্য। তবে ইপানিউটিন ব্যবহারে রক্ত পড়ার চেয়ে মাড়ি ফুলে বড় হয়ে লাল রং ধারণ করে এবং প্রায় পুরু দাঁতটাই মাড়ি দিয়ে ঢেকে যায়। মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার প্রতিকার যেকোনো রোগেরই চিকিৎসা করার আগে সেই রোগের সত্যিকার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। অপরিচ্ছন্নতার জন্য মাড়ি ও দাঁতে জমে থাকা নরম ও কঠিন বস্তু, যথা জীবাণুর প্রলেপ ও খাদ্যকণা রোগী নিজেই পরিষ্কার করতে পারে। তবে জীবাণুর প্রলেপ একবার শক্ত হয়ে পাথরে পরিণত হলে তা ডেন্টাল সার্জন কিংবা অভিজ্ঞ কোনো দন্ত সহকারী দ্বারা পরিষ্কার করিয়ে নিতে হয়। ট্যারা, বাঁকা কিংবা উঁচু-নিচু দাঁতের কারণে রক্ত পড়লে সে ক্ষেত্রে স্কেলিং করানোর সঙ্গে সঙ্গে আঁকাবাঁকা দাঁতের চিকিৎসা ও অর্থোডনটিস্টের (দাঁত সামঞ্জস্যকরণ) সাহায্য নিতে হবে। বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে দন্তচিকিৎসকদের পাথর তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে ‘স্কেলিং’ বলা হয়। এটা অতি সূক্ষ্ম ও সময়সাপেক্ষ কাজ এবং এ কাজে যথেষ্ট ধৈর্য ও দক্ষতার প্রয়োজন। স্কেলিং বা দন্ত পাথরি পরিষ্কার শুরু হওয়ার পরপরই রক্ত পড়া ও প্রদাহ কমে যায়। কিন্তু দেহগত কোনো রোগের কারণে রক্ত পড়লে সে ক্ষেত্রে ওই রোগের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও একই সঙ্গে করাতে হয়। মাড়ি জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে ‘স্কেলিং’ করার আগেই জীবাণু প্রতিরোধক ব্যবহার করতে হয় এবং রোগীকে প্রচুর পানি খেতে বলা হয়। ভিটামিন ‘সি’র অভাবে রক্ত পড়লে সে ক্ষেত্রে ‘স্কেলিং’ করার পর ভিটামিন ‘সি’যুক্ত খাবার খেতে হবে। তবে সাধারণত মাড়ি রোগের নিরাময় কিংবা রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য কেবল ভিটামিন ‘সি’ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, রোগী নিজে সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত নিয়মিত পরিষ্কার না করলে কোনো ডাক্তারের পক্ষেই এ রোগের সাফল্যজনক চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।